১০ পণ্যের পোস্ট হারভেস্ট লস: বছরে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি

harvest Losses

বাংলাদেশে পেঁয়াজে ২০-২৫%, আমে ৩০-৩৫%, কলা, পেঁপে, পেয়ারা ও লিচুতে ২৫-৩০%, চালে ৮-৯%, ডালে ৬-৭%, আলুতে ১০% এবং আদায় পোস্ট হারভেস্ট লস ৫-৭%।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, মশলা ও ফলমূলের ১০টি পণ্যের পোস্ট হারভেস্ট লস তথা ফসল কর্তন পরবর্তী অপচয় ৫.১৩ মিলিয়ন মে. টন। এই খাদ্যশস্যের আর্থিক মূল্য কমপক্ষে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অথচ ফসল কর্তন পরবর্তী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ‘শেলফ লাইফ’ (মজুতকাল) বাড়িয়ে এই ক্ষতির বড় একটি অংশ রক্ষা করা সম্ভব, যা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও জোরদার করবে।

সোমবার ঢাকার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) এবং যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির যৌথভাবে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

‘দ্য ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর দ্য এস্টাবলিশমেন্ট অব এন ই-বিম/এক্সরে ফ্যাসিলিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশনে বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রধান ড. শরিফুল হক ভূইয়া একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, বাংলাদেশে পেঁয়াজে ২০-২৫%, আমে ৩০-৩৫%, কলা, পেঁপে, পেয়ারা ও লিচুতে ২৫-৩০%, চালে ৮-৯%, ডালে ৬-৭%, আলুতে ১০% এবং আদায় পোস্ট হারভেস্ট লস ৫-৭%। এই ১০টি পণ্য বছরে উৎপাদিত হয় ৫২.৫৭ মিলিয়ন মে. টন, যেখান থেকে ৫.১৩ মিলিয়ন মে. টন শস্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এই অপচয় কমাতে বিনা একটি ই-রেডিয়েশন সেন্টার তৈরি করতে চায় গাজীপুরে। যেখানে ই-বিম/এক্সরে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পেরিশেবল (সহজে নষ্ট হয় এমন) খাদ্যপণ্যের শেলফ লাইফ বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই ই-রেডিয়েশন সেন্টারটি তৈরি হলে বছরে ৩১৮.৩২ কোটি টাকার পোস্ট হারভেস্ট লস কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটি।

বিনা এই ই-রেডিয়েশন সেন্টারটি স্থাপন করতে চায় দুই বছরের মধ্যে। বর্তমানে চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

একই সঙ্গে সবজি ও পেরিশেবল পণ্যগুলোর বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই প্র্রযুক্তি বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কারণ এসব পণ্যের শেলফ লাইফ কম থাকার কারণে তা সহজে রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। একই সঙ্গে সবজি কাটার পরে এর গায়ে যে দাগ পড়তে থাকে এবং নানা ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ আসে তা এর মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব।

এছাড়া পচনশীল খাদ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশের যে ‘ফাইটোস্যানিটারি কন্ট্রোল স্ট্যান্ডার্ড’ পূরণের চাহিদা থাকে, তাও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মেটানো সম্ভব।

বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, “কোন কোন কৃষিপণ্যে আমাদের পোস্ট হারভেস্ট লস ৩০-৪০%। আমরা কৃষি পণ্য উৎপাদন করছি, রপ্তানির বাজার আছে, অথচ আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাই।”

এই প্রযুক্তিটি ফ্রেশ ফুড, ফ্রোজেন ও ক্যানড ফিশ এবং মিটের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয়।

অনুষ্ঠানে প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবের রিডিউস প্রোগ্রাম ম্যানেজার জেনিফার এলস্টার বলেন, “এক্স-রে প্রযুক্তি এখন বিশ্বব্যাপী মিলছে। আমেরিকা ২০১৫ সালে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে।”

অনুষ্ঠানে বিএআরসির চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, “আমাদের কৃষিপণ্য আমদানিতে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। গম, তুলা, ভোজ্যতেল সহ বিভিন্ন পণ্যের পেছনে এই ব্যয় প্রায় ১২-১৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার।”

তিনি বলেন, “আমরা প্রচুর পরিমাণ খাদ্যপণ্য উৎপাদন করছি। কিন্তু এর একটা অংশ নষ্ট হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পোস্ট হারভেস্ট লস কমানোর উদ্যোগটি তাই গুরুত্বপূর্ণ।”

শেয়ার করুন:-

বিজ্ঞাপন

সম্পর্কিত খবর