
চলতি ২০২৪ বছরে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। বছরজুড়ে আইপিওর মাধ্যমে চারটি এবং কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে দুটি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছে। এছাড়া, মধ্যে মাত্র দুটি ব্যাংক বন্ড ছেড়ে মূলধন সংগ্রহ করেছে। চলতি বছর পুঁজিবাজার থেকে মোট ১ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর আগের বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ৩টি, কিউআইওর মাধ্যমে ৩টি, মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে একটি ও ৪টি বন্ড ইস্যু করে মোট ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছিল। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে পুঁজিবাজার থেকে ৪৬৭ কোটি টাকার কম মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) গত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, চলতি বছরে পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড ১০০ কোটি টাকা, বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড লিমিটেড ৩৫০ কোটি টাকা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড ৯৫ কোটি টাকা এবং টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
এছাড়া, শেয়ারবাজার থেকে কিউআইওর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে- ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড ৫ কোটি টাকা এবং ওয়েব কোটস পিএলসি ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। আর সাউথইস্ট ব্যাংক ফাস্ট পারপেচুয়াল বন্ড ৪৫০ কোটি এবং ইউসিবি সেকেন্ড পারপেচুয়াল বন্ড ২৭০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির আইপিও, কিউআইও ও মিউচুয়াল ফান্ড অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উল্লেখযোগ্য কোনো কোম্পানি আইপিও বা কিউআইওতে আসেনি। বরং, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারে গভীরতা বাড়াতে নতুন নতুন ভালো কোম্পানি আনতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা ইচ্ছামতো ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন। ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারের ভিত্তি আরো শক্তিশালী হবে এবং গভীরতা আরো বাড়বে।
এদিকে, সম্প্রতি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চাওয়া আবাসন খাতের কোম্পানি বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের আবেদন বাতিল করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি)।
এছাড়াও, ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চাওয়া বস্ত্র খাতের কোম্পানি বি ব্রাদার্স গার্মেন্টস লিমিটেড এবং ১৫ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চাওয়া বিমা খাতের কোম্পানি জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের আবেদন বাতিল করেছে কমিশন।
চলতি বছরের অক্টোবরে পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেমিনি সি ফুডের ১২৮ কোটি টাকার রাইট শেয়ারের আবেদন বাতিল করেছে বিএসইসি। কোম্পানিটি ২ (আর):১ হারে রাইট শেয়ার ইস্যু করতে চেয়েছিল। অর্থাৎ বিদ্যমান প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি রাইট শেয়ার ইস্যু করতে চেয়েছিল। প্রতিটি রাইট শেয়ারের অফার মূল্য ছিল ফেসভ্যালু ১০ টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ৬০ টাকা। কোম্পানিটি ২ কোটি ১৩ লাখ রাইট শেয়ার ছাড়তে চেয়েছিল।
তবে বিএসইসির পাইপলাইনে আইপিও, কিউআইও ও রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে আরো কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অপেক্ষায় আছে বলে জানা গেছে।
এসএম