economistpost.com

বড় দশ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৫ হাজার কোটি টাকা

সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ১৪ বছরের একই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম। অর্থ সংকট ছিল না এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ নয়। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর কাজও চলছে ঢিমেতালে। বাস্তবায়ন কম হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ও কম। এ পরিস্থিতিতে ফাস্টট্র্যাকভুক্তসহ ১০ বড় প্রকল্পের বরাদ্দে বড় ধরনের কাটছাঁট হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ফাস্টট্র্যাকসহ ১০ বড় প্রকল্পের বরাদ্দ কমছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল এডিপিতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ২৭ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ চেয়েছে ২২ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার মতো।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে এমআরটি-৬, এমআরটি-১, এমআরটি-৫ (উত্তর), কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা রেলওয়ে সংযোগ, ঢাকা বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু রেল সেতু, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন ও দোহাজারী-কক্সবাজারের রেল সংযোগ প্রকল্প।

এগুলোর বেশ কয়েকটিতেই বরাদ্দ ও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন অগ্রগতির মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ কমানোর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি)। এসব প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রয়েছে।

আরএডিপি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ অনেক কম চেয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এডিপি ও আরএডিপিতে বরাদ্দ চাহিদার এত বেশি ব্যবধান আগে কখনও দেখা যায়নি। নানা কারণে গত সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার অত্যন্ত কম থাকায় এমনটি হয়েছে। সরকারের কৃচ্ছ্র নীতির কারণে বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে। গাড়িসহ কিছু কেনাকাটা বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে এবার এডিপি বাস্তবায়ন বেশি হয়নি। বরাদ্দ কমানো-বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিবেচনা করা হচ্ছে।

চলতি মাসের শেষ নাগাদ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত হতে পারে। একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এর আগে সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বর্ধিত সভা হয়ে থাকে। মূলত এ সভা থেকেই সংশোধিত এডিপি কাটছাঁটের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়। জানা গেছে, বর্ধিত সভা এ সপ্তাহে হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। সভার নতুন তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। তাই সংশোধিত এডিপি অনুমোদন সংক্রান্ত এনইসির বৈঠকও পেছাতে পারে।

বড় এই ১০ প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট এমআরটি-৬ বা মেট্রোরেল। ইতোমধ্যে রাজধানীবাসীর মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পটি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি-৬ প্রকল্পের চলতি এডিপি থেকে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত এমআরটি-১ প্রকল্পে চলতি এডিপির বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছে কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।

একইভাবে এমআরটি-৫ (উত্তর) প্রকল্পের বরাদ্দও আপাতত চলতি অর্থবছরের জন্য কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর প্রকল্পটিতে বরাদ্দ রয়েছে ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে কর্তৃপক্ষ চেয়েছে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

বড় অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে মূল এডিপি বরাদ্দ রয়েছে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৭০০ কোটি এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চেয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা।

Exit mobile version